শিরক “شرك” আরবী শব্দ। এ শব্দের আভিধানিক অর্থ অংশীদার স্থাপন করা। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের পরিভাষায় শিরক অর্থ ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা। মহান আল্লাহ বলেন- فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَآءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا [উচ্চারণ: ফামান কানা ইয়ারজূ লিক্বাআ রাব্বিহী ফালইয়া’মাল ‘আমালান সালিহাও, ওয়ালা ইউশরিক বি’ইবাদাতি রাব্বিহী আহাদা।] অর্থাৎ : “যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ বা দীদার লাভের আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে, এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।” (সূরা-আল কাহ্ফ-১৮ : আয়াত-১১০) আল্লাহ তায়ালা শিরককে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ বলে গণ্য করে থাকেন। এরশাদ হচ্ছে— إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ [ উচ্চারণ: ইন্নাশ শিরকা লাজ্বলমুন ‘আজ্বীম।] অর্থাৎ : “নিশ্চয়ই শিরক তো মহাপাপ।” (সূরা-লুকমান-৩১ : আয়াত-১৩) মানুষের সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে বা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত হতে হবে। অথচ মানুষ বুঝে হোক, না বুঝে হোক, শিরকের মত জঘন্য অপরাধ করে থাকে। যেমন নামাজে দাঁড়িয়ে আমরা মুখে বলি— إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ [উচ্চারণ: ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’ঈন।] অর্থাৎ : “আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি, এবং আমরা তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” (সূরা-আল ফাতিহা-১ : আয়াত-৪) অথচ মনে মনে অন্য কিছুর কল্পনায় ডুবে থাকি। নামাজে দাঁড়িয়ে বাজে কল্পনা মনে আসলে ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরিক করা হয়। এ প্রসঙ্গে হযরত জাবের (রা:) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহ রাসুল সাঃ এরশাদ করেন - إِذَا قَامَ الرَجُلُ فِى الصَلاَةِ أَقْبَلَ اللَهُ عَزَّ وَجَلَّ بِوَجْهِهِ فَإِذَا الْتَفَتَ قَالَ يَا ابْنَ آدَمَ إِلَى مَنْ تَلْتَفُتُ إِلَى مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّى أَقْبِلْ إِلَى فَإِذَا الْتَفَتَ الثَانِيَةَ قَالَ يَا ابْنَ آدَمَ مِثْلَ ذَلِكَ فَإِذَا الْتَفَتَ الثَالِثَةَ صَرَفَ اللَهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَنْهُ وَجْهَهُ [ উচ্চারণ: ইযা ক্বামার রাজুলু ফিস সালাতি আক্ববালাল্লাহু ‘আঝঝা ওয়া জাল্লা বিওয়াজহিহী ফাহিযা ইলতাফাতা ক্বালা ইয়া ইবনা আদামা ইলা মান তালতাফিতু ইলা মান হুওয়া খাইরুম মিন্নী আক্ববিল ইলাইয়্যা ফাইযা ইলতাফাতাছ সারাফাল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা ‘আনহু ওয়াজহাহূ। ] অর্থাৎ : “কোন ব্যক্তি যখন সালাত আদায়ে দণ্ডায়মান হয়, তখন মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ্ তাঁর ঐ বান্দার দিকে নিজের চেহারা মোবারক ফেরান। সে যখন অন্যমনস্ক হয়, তখন আল্লাহ বলেন- “ হে আদম সন্তান! তুমি কার দিকে তাকাচ্ছ? আমার চেয়ে উত্তম কারো দিকে কি? আমার প্রতি মনোযোগী হও।” অতঃপর সে যদি দ্বিতীয়বার অন্যমনস্ক হয়, তবে পুনরায় আল্লাহ তায়ালা একথা বলেন। যদি আবারো তৃতীয়বার অন্যমনস্ক হয়, তখন আল্লাহ তা'আলা তার দিক থেকে স্বীয় চেহারা মোবারক ফিরিয়ে নেন।”’ (মুসনাদে ইমাম বাজ্জারের সূত্রে তাফসীরে মাজহারী ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮৫) এমনিভাবে হযরত সাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ)হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা:) কে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন - مَنْ صَلَّى يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ، وَمَنْ تَصَدَّقَ يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ، وَمَنْ صَامَ يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ [উচ্চারণ:মান সাল্লা ইউরাঈ ফাকাদ আশরাক, ওয়া মান তাসাদ্দাকা ইউরাঈ ফাকাদ আশরাক, ওয়া মান সাআমা ইউরাঈ ফাকাদ আশরাক।] অর্থাৎ : “যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করে, সে অবশ্যই শিরক করেছে। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে রোজা পালন করেছে, সে শিরক করেছে। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করেছে, সেও নিঃসন্দেহে শিরক করেছে।” (মুসনাদ আহমাদের সূত্রে তাফসীরে মাজহারী -১ম খন্ড, পৃষ্ঠা -৪১২) এভাবে নামাজ, কিংবা অন্যান্য ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্য কিছুর কল্পনা করাই শিরক। অতএব যাবতীয় ইবাদতে আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া উচিত।