Back to Articles

কাফির কাকে বলে

September 29, 20255 min read8 views


আরবী "কুফরুন" (كُفْرٌ) শব্দ থেকে "কাফির" (كَافِرٌ) শব্দের উৎপত্তি। কাফির (كَافِرٌ) শব্দের আভিধানিক অর্থ—অবিশ্বাসী,অস্বীকারকারী, অকৃতজ্ঞ, আবৃত করা বা ঢেকে রাখা। শরীয়তের পরিভাষায় কাফির অর্থ - যে  ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশিত সত্য গোপন করে বা প্রত্যাখ্যান করে।

ওহীর বাণী পবিত্র কুরআন শরীফে কাফির বলতে সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মহাকালের ধারাবাহিকতায় মহান আল্লাহ্‌ আম্বিয়ায়ে কেয়াম তথা নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে এর সঠিক ও সত্য পথের সন্ধান দিয়েছেন। এ সকল নবী ও রাসূলগণের অস্বীকারকারী ও তাঁদের নির্দেশ-উপদেশ প্রত্যাখ্যানকারীদের কাফির বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এ সকল কাফিরের প্রসঙ্গেই আল্লাহ বলেন—

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ ءَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿۶﴾ خَتَمَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْ ۖ وَعَلَىٰ أَبْصَـٰرِهِمْ غِشَـٰوَةٌ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿۷﴾

[উচ্চারণ: ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ সাওয়াউন ‘আলাইহিম আআনযারতাহুম আম লাম তুনযিরহুম লা ইউ’মিনূনা, খাতামাল্লাহু ‘আলা ক্বুলূবিহিম ওয়া ‘আলা সাম’ইহিম, ওয়া ‘আলা আবসারিহিম গিশাওয়াহতুন, ওয়ালাহুম ‘আযাবুন ‘আজ্বীম।]

অর্থাৎ : [“(হে রাসূল (সাঃ)!] নিশ্চয় যারা কাফির হয়েছে, তাদেরকে আপনি সতর্ক করুন, অথবা না করুন, তাদের পক্ষে উভয়ই  সমান; তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ্ তাদের ক্বালব বা অন্তরের উপর, এবং তাদের কর্ণের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন। তাদের চক্ষুর উপর পর্দা বা আবরণ রয়েছে। আর তাদেরই জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।” (সূরা-আল বাকারাহ -২ :আয়াত  ৬ ও ৭)

মহান রাব্বুল আলামীন মানুষকে আপন প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা সহকারে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষের ক্বালবের সপ্তম স্তরে আল্লাহর এক টুকরো নূর সুপ্ত অবস্থায়  বিদ্যমান থাকে। মহিমান্বিত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা:) এর  উপর বিশ্বাস আনয়নকারী মানুষ যখন সাধনার মাধ্যমে ক্বালবের ঐ সুপ্ত নূর প্রজ্বলিত করতে সক্ষম হয়, তখনই ঐ প্রজ্বলিত নূরের প্রভাবে তার চরিত্র ও কর্মে আল্লাহর গুণাবলী বিকাশ লাভ করে। এভাবেই মানুষ আল্লাহর খলিফায় পরিণত হয়। 

 পক্ষান্তরে অবিশ্বাসী ও গোমরাহ মানুষ নিজের ভেতরে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে। মহান আল্লাহ বলেন—

فَمَن شَرَحَ اللّٰهُ صَدْرَهُ لِلْاِسْلٰمِ فَهُوَ عَلٰى نُوْرٍ مِّنْ رَّبِّهٖ فَوَي لِّلْقٰسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِّنْ ذِكْرِ اللّٰهِ اُولٰٓئِكَ فِيْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ

[উচ্চারণ: আফামান শারাহাল্লাহু সাদরাহু লিলইসলামি ফাহুওয়া ‘আলা নূরিম মির রাব্বিহী ফাওাইলুল্লিল ক্বাসিয়াতি ক্বুলুবুহুম মিন যিকরিল্লাহি, উলাইকা ফী দ্বালালিম মুবীন।]


অর্থাৎ : "আল্লাহ যার ক্বালবের সুদুরের মোকামকে  ইসলামের (আত্মসমর্পণের) জন্য  খুলে দিয়েছেন, এবং যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের কাছ থেকে আগত নূর বা আলোর মাঝে রয়েছে, সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়? দুর্ভোগ  তাদের জন্য, যাদের কঠোর ক্বালব আল্লাহর জিকির থেকে বিমুখ। আর তারা রয়েছে প্রকাশ্য গোমরাহীতে।" (সুরা-ঝুমার -৩৯ : আয়াত-২২)

প্রকৃতপক্ষে নবী ও রাসুলগণ মানুষকে আল্লাহর সাথে যোগাযোগের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে থাকেন। যে সকল মানুষ তাঁদের দেয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজের ক্বালব বা অন্তরের অন্ধকার দূর করে, আল্লাহর নূরে উক্ত ক্বালবকে আলোকিত করতে পারে, তারাই প্রকৃত  মু’মিন।  আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে নিজের ক্বালব বা অন্তরে অন্ধকার নূরকে অন্ধকারে  ঢেকে রাখে, তারাই প্রকৃত অর্থে কাফির। বিষয়টি মহিমান্বিত  আল্লাহ তাঁর পাক জবানে বলে দিয়েছেন। এরশাদ  হচ্ছে—

وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيٰتِنَآ اُولٰٓئِكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خٰلِدُوْنَ

উচ্চারণ: ওয়াল্লাজিনা কাফারূ ওয়া কাযযাবূ বিআয়াতিনা উলাইকা আসহাবুন নারি, হুম ফীহা খালিদূন।


অর্থাৎ : "আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে, এবং আমার নির্দেশনাগুলোকে অস্বীকার  করে, তারাই জাহান্নামী; সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে।" (সুরা-আল বাকারাহ-২ : আয়াত-৩৯)

কাফেরের নিকৃষ্ট চরিত্র সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন- 


الكافِرُ لا يُبْصِرُ الحَقَّ وَالهُدى مِن شُدَّةِ ظُلمَةِ قَلبِه
[উচ্চারণ : আলকাফিরু লা ইউবসিরুল হাক্বক্বা ওয়াল হুদা মিন শিদ্দাতি জুলমাতি ক্বালবিহী।]

অর্থাৎ:  “কাফির ব্যক্তি তার অন্ধকারাচ্ছন্ন ক্বালব বা অন্তরের কারণে সত্য ও হিদায়েত দেখতে পায় না।” (তাফসীর ইবনে আব্বাস, পৃষ্ঠা-৩৫৬)

পক্ষান্তরে প্রকৃত মু’মিন ব্যক্তির ক্বালব বা অন্তর আল্লাহর নূরে আলোকিত থাকায়, সে সত্যকে দেখতে পায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-

اتَّقُوا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ
[উচ্চারণ : ইত্তাকূ ফিরাসাতাল মু’মিনি ফা ইন্নাহু ইয়ানজুরু বিনূরিল্লাহি ‘আঝঝা ওয়া জ্জাল্লা।]

অর্থাৎ :  “তোমরা মু’মিন ব্যক্তির অন্তর্দৃষ্টিকে ভয় করো, কেননা সে মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহর নূর বা জ্যোতির সাহায্যে দেখে থাকে।” (তাফসীর আলীয়্যুন ফিল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪১৬; তাফসীর জিলানী-৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪১৩)

নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে হযরত রাসূল (সাঃ)-এর সিরাজুম মুনীরের ধারক ও বাহক যুগের ইমাম, মুজাদ্দেদ ও আধ্ওলিয়ায়ে কেরামের সাহচর্যে গিয়ে, তাঁদের নির্দেশিত পথে, সাধনার মাধ্যমেই ক্বালবে আল্লাহর নূর বিকশিত করা সম্ভব। আর শুধুমাত্র এ উপায়েই  মানুষ হতে পারে প্রকৃত মু’মিন। পক্ষান্তরে যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে এ পথ থেকে দূরে থাকে, তারা অন্তরে আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করে না, পরিণামে তারাই হয় কাফির।


Share this article:

More Articles You May Like

আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক কি না
ইসলামী আকিদাহ
October 5

আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক কি না

ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করাকে শিরক বলা হয়। তবে জীবনের প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নেওয়া শিরক নয়। নেক কাজে একে অপরকে সাহায্য করা ইবাদতের অংশ, আর প...

Read More
ঈমান কি? ঈমানের স্তর কয়টি ও কি কি?
ইসলামী আকিদাহ
October 3

ঈমান কি? ঈমানের স্তর কয়টি ও কি কি?

ঈমান الایمان অর্থ বিশ্বাস। আল্লাহ্র  একত্ববাদের প্রতি অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করার নামই ঈমান। নিশ্চয়ই ঈমান হচ্ছে ক্বালবের ভেতর শুভ্র আলোকোজ্জ্বল ...

Read More
মুসলমান কাকে বলে? উত্তরাধিকার সূত্রে বা জন্মসূত্রে মুসলমান হওয়া যায় কি
ইসলামী আকিদাহ
October 2

মুসলমান কাকে বলে? উত্তরাধিকার সূত্রে বা জন্মসূত্রে মুসলমান হওয়া যায় কি

ইসলাম ও মুসলিম শব্দের উৎপত্তি "সিলমুন (سَلِمَ)" শব্দমূল থেকে, যার অর্থ শান্তি। ইসলাম মানে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা, আর মুসলিম মানে আত্মসমর্পণকারী। ...

Read More